Breaking News

মঞ্চে দাঁড়ালে কাঁপে পা?



মঞ্চে দাঁড়ালে কাঁপে পা?

 সহশিক্ষা, স্কিল ডেভেলপমেন্ট

বন্ধুদের চাপে কলেজের উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছে তন্বী। শুরুতে সহজ মনে হলেও স্টেজে দাঁড়ানোর সাথে সাথে ভয়টা টের পেল সে। একটা-দু’টো নয়, একসাথে কয়েকশো জোড়া চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে! আস্তে আস্তে টের পেল তার পা দুটো কাঁপছে, সেই সাথে গলা শুকিয়ে কাঠ। মাইকটা মুখের সামনে এনে আর কথা বলতে পারছে না তন্বী। হাত ঘেমে যাওয়ার ফলে মাইকটা বোধহয় ওর হাতের ফাঁক গলে বেড়িয়ে পড়বে।

আচ্ছা, উপরের ঘটনাটা পড়ে কি তোমার মনে হলো না যে, এটা তোমারই জীবনের ঘটনা? নিশ্চয়ই এমন ঘটনা তোমার সাথেও ঘটেছে। ক্লাসে টিচার বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে কিংবা প্রেজেন্টেশনের সময় আমাদের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, হাত-পা কাঁপে, গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না, কথা বলার সাথে সাথে হাঁটু কাঁপতে থাকে। এইসবই মঞ্চভীতি বা ‘Stage Fright’-এর লক্ষণ। আর অবাক করার বিষয় হচ্ছে প্রতি ১০০ জনের ৭৫ জনই এই মঞ্চভীতিতে আক্রান্ত!
কিন্তু আমরা অনেকেই এই ব্যাপারটা সকলের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখি। এটা লুকিয়ে রাখার বা লজ্জা পাওয়ার কোনো বিষয় নয়। বন্ধুমহলে এই দুর্বলতার ব্যাপারটা প্রকাশ না করলে অনেক সময়ই না জেনে-বুঝে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হতে পারে।
এই মঞ্চভীতি কিন্তু একধরণের ফোবিয়া, আর একে বলা হয় ‘Social Anxiety Disorder’ বা  ‘Social Phobia’।
সমস্যা এড়িয়ে না যেয়ে সমস্যা সমাধান করাটা বুদ্ধিমানের কাজ। তাই চলো মঞ্চভীতিকে তাড়ানোর বেশ কিছু উপায় জেনে আসা যাক!

১. নিজের শরীর ও মনকে হালকা রাখো:

স্টেজে যাওয়ার আগে নিজের জন্য ৫ মিনিট রাখো। এই ৫ মিনিটে চট করে লাইনগুলোয় চোখ বুলিয়ে নাও। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিলে নিজেকে ফ্রেশ লাগবে। স্টেজে কথা বলার মাঝখানে লাইন গুলিয়ে ফেললে দুশ্চিন্তা করার কিচ্ছু নেই! এমন কিছু মজাদার লাইন বা অভিনয় করে, বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসো। এছাড়াও স্টেজে যাওয়ার আগে আর যা যা করতে পারো-
  • একটু গুনগুন করে নিজের কণ্ঠকে ঠিক করে নাও।
  • মঞ্চে ওঠার আগে একটা কলা খেয়ে নিতে পারো। এর ফলে তোমার পেট খুব বেশি ভরা ভরা লাগবে না, আবার খালি খালিও মনে হবে না।
  • আমরা সবাই চুইংগাম চিবোতে পছন্দ করি, বিশেষ করে যখন বোর হই। মঞ্চে ওঠার আগে একটু চুইংগাম খেয়ে নিলে ব্যাপারটা মন্দ হয় না!
  • মঞ্চে ওঠার আগে নিজের শরীরে একটু মোচড় দিয়ে নাও। ভালো কথায় যাকে বলে ‘স্ট্রেচিং’। হাত-পা, বাহু একটু টানাটানি করলে নিজের ভেতরে এক অন্যরকম জীবনীশক্তি কাজ করে।
  • একটু অভিনয় বা ঠাট্টাচ্ছলে কথা বললে দুঃশ্চিন্তা মনের ভেতরে কম কাজ করে।

২. ধ্যান করা:

নিজের পারফরমেন্সের এক ঘণ্টা আগে ১০-১৫ মিনিটের মেডিটেশন করে নিলে মন থেকে অপ্রীতিকর বিষয়গুলো দূর হয়ে যায় এবং ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়।

৩. নিজেই নিজেকে উৎসাহ দাও:

মঞ্চে যাওয়ার আগে আয়নার সামনে দাঁড়াও। নিজেই নিজেকে বলো যে, তোমাকে পারতেই হবে! সবাই পারলে তুমি কেনো পারবে না? হ্যাঁ হয়তো অনেকেই পারে না, কিন্তু তুমি কেনো সেই “পারে না”-র দলে পড়বে? নিজের লক্ষ্য নিজেই ঠিক করো এবং সেই লক্ষ্য মোতাবেক কাজ শুরু করে দাও। তুমি একজনই, তোমার মতন আর কেউ নেই। তাই হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা তুমি কখনোই বলতে পারো না!

৪. স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল:

নিজের পারফরমেন্সের আগে ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করে নিলে নার্ভাসনেসটা কমে যায়, আর নিজেকে সতেজ মনে হয়। যার কারণে তোমার পুরো মনোযোগ থাকবে তোমার কাজের উপরেই।

৫. মন খুলে হাসো:

এমন কয়েকজন বন্ধু থাকে, যাদের সঙ্গ আমাদের প্রাণ খুলে হাসায়। মঞ্চে ওঠার আগে সেইসব বন্ধুদের সাথে থেকে ভয়টাকে কমিয়ে আনো। কিংবা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ইউটিউবে ফানি ভিডিও বা জোকসও দেখে নেওয়া যেতে পারে।

৬. সময়ের আগেই চলে যাও:

নিজের প্রেজেন্টেশনের বেশ কিছুক্ষণ আগে প্রেজেন্টেশন রুম থেকে ঘুরে আসতে পারো। এমন সময় যাবে, যখন কোনো দর্শকও এসে পৌঁছাবে না। দর্শকসারি কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ার আগেই নিজেকে সামলে নেওয়া যাবে সেখানে গিয়ে। আর তাড়াতাড়ি যাওয়ার ফলে নিজের ভেতর সময়মতো পৌঁছানোর ভয়টাও নিমিষেই উড়ে  যাবে।


৭. দর্শকদের সাথে কথা বলো:

অনুষ্ঠান শুরুর আগে দর্শকদের সাথে ভাব বিনিময় করলে দর্শকদের চাহিদা বোঝা যায়। তারা কেন এই অনুষ্ঠানে এসেছে কিংবা বক্তার কাছ থেকে কী শুনতে চায়, এটা জানা যায়। আর এভাবে দর্শক সারিতে বসে দর্শকদের সাথে কথা বলার ফলে তাদেরকে আমাদের মতন সাধারণ মানুষই মনে হয়! তাই আমরাও স্টেজে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারি।

৯. প্রিয় কোনো মানুষকে দর্শকসারিতে কল্পনা করা:

এমন অনেক বিষয় আছে, যা আমরা অপরিচিত কাউকে বলতে ভয় পাই, কিন্তু বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে অকপটে বলতে পারি। এমন কোনো ভয় বা কষ্টের বিষয়, যা আমরা কারো সাথে শেয়ার করতে পারি না; সেটাও বন্ধুদের দিকে চোখ বন্ধ করে রেখেও বলতে পারি। তাই মঞ্চে ওঠার সময় দর্শকসারির প্রত্যেকটা মানুষকে আমাদের প্রিয় কোনো মানুষের সাথে কল্পনা করবো। সেই সব মানুষকে নিয়ে চিন্তা করবো, যারা আমাদের কথা মন দিয়ে শোনে, উৎসাহ দেয় এবং অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ভাল হোক বা না হোক, আমাদের জন্য তালি দেয়!

১০. সুরে ছন্দে বাঁধো শব্দ:

টানা কোনো কিছু পড়লে জিনিসটা মনে থাকে না। কিন্তু প্রিয় কোনো কবিতার ছন্দ বা গানের সুরে সুরে কোনো কিছু পড়লে তা সহজেই মনে থাকে। তাই নিজের স্ক্রিপ্ট তেমনিই কোনো গান বা কবিতার সুর অনুযায়ী মিলিয়ে কয়েকবার পড়ো। দেখবে মঞ্চে যাওয়ার সাথে সাথে সব মনে পড়ে যাচ্ছে।

যেভাবে উপস্থাপনা করবে:

  • আমাদের মঞ্চভীতিটা তৈরি হয় তখন, যখন দেখি আমাদের কথা বলার টপিকটা আকর্ষণীয় না। সব টপিকই যে আকর্ষণীয় হবে, এমনটা তো কোথাও বলা নেই৷ বরং আমাদেরই কথা বলার ধরণ এমন হতে হবে, যাতে বোরিং টপিকটাও মানুষ আগ্রহ নিয়ে শোনে। তাই নিজের বডি ল্যাংগুয়েজ ঠিক রেখে সকলের দিকে তাকিয়ে কথা বলা উচিত৷ মঞ্চে দাঁড়িয়ে দর্শকদের সাথে মজা করো, কৌতুক শোনাও এবং তাদের সাথে হাসতে থাকো। যদি দেখো কেউ তোমার কোনো দুর্বলতা নিয়ে হাসছে, তুমিও নিজের সেই দুর্বলতাটা নিয়ে তার সাথে হাসতে থাকো। অন্যকে নিয়ে মজা তো আমরা সবাই করতে পারি, কিন্তু নিজেকে নিয়ে মজা কয়জনই বা করতে পারি?
  • দর্শকসারিতে কোন বয়সের মানুষ বেশি আছে, সেই অনুযায়ী তোমার প্রেজেন্টেশন হবে। যদি তোমার চেয়ে ছোট কেউ থাকে, তখন তুমি তোমার বডি ল্যাংগুয়েজ রাখবে স্বাভাবিক, গলার টোন থাকবে মোলায়েম এবং সবকিছু উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করবে। আর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো, মুখে হাসি রাখতেই হবে! আর যদি তোমার চেয়ে বড় কেউ তোমার দর্শক হয়, তাহলে যুক্তি দিয়ে এবং প্র্যাকটিক্যালি তোমার কথা বোঝাবে। তাহলে তোমার মধ্যে নার্ভাসনেসটা কম কাজ করবে।
  • যদি নিজের মধ্যে নার্ভাসনেস কাজ করেও, তাও সেটা সামনের মানুষদের বুঝতে দিও না। নিজের বিব্রতভাবটা কাটানোর জন্য ছোট্ট মজার গল্প দিয়ে শুরু করতে পারো। তুমি যে নার্ভাস ফিল করছো, এটা সবাইকে জানানোর পর হয়তো তোমার নিজেকে হালকা মনে হতে পারে; কিন্তু এটা শোনার পর দর্শকেরা হয়তো আগ্রহ নিয়ে তোমার কথা আর শুনতে চাইবে না।
  • নিজের কথা বলার ভঙ্গি ক্যামেরা দিয়ে রেকর্ড করে পরে দেখা যেতে পারে। এইভাবে বারবার রেকর্ড করে ভিডিও টেপটা দেখতে হবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজের কাছেই তা ভালো লাগে। কারণ যখন নিজেরই কোনো কিছু ভাল না লাগে, তখন অন্যদেরও সেটা ভাল লাগে না।
  • স্টেজে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে না থেকে একটু এ মাথা থেকে ও মাথা হাঁটা চলা করা উচিত। এতে করে আড়ষ্টভাবটা কম অনুভূত হবে এবং নিজের আত্মবিশ্বাসটাও বাড়বে।
  • ধীরে সুস্থে কথা বলার অভ্যাস করো। অধিকাংশ পাবলিক স্পিকার এত দ্রুত কথা বলে যে তাদের অনেক কথা বোঝাই যায় না। কিন্তু ধীরে কথা বলার ফলে আমাদের উচ্চারণ শুদ্ধ হয় এবং কথাও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। কথার মাঝে মাঝে থামতে হবে। তাহলে দর্শকও একটা লাইনের সাথে অন্য লাইনের সাদৃশ্য খুঁজে পাবে।
  • উপস্থাপনা শেষ হওয়ার পর সবাইকে জিজ্ঞেস করতে পারো যে কেমন লেগেছে। এতে করে পরবর্তী উপস্থাপনার জন্য তুমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রস্তুতি নিতে পারবে।

  • মঞ্চভীতি দূর করার কিছু পন্থা:

    ১. নকল আত্মবিশ্বাস:
    মনের মধ্যে যত ভয়ই থাকুক না কেন, চেহারায় সেটা কখনো বুঝতে দেওয়া চলবে না। এমনভাব করতে হবে, যেন তুমি একজন ‘জোশ!’ মানুষ। ‘সেই লেভেলের পার্ট’ নিয়ে স্টেজে উঠবে, যতই তোমার হাত কাঁপুক! মঞ্চে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এবং মুখে একটা স্মিত হাসি রাখবে।

    ২. ইতিবাচক চিন্তা করো:
    খারাপ হলে লোকে তোমাকে কী বলে তা না ভেবে, ফাটাফাটি লেভেলের পারফরমেন্স হলে মানুষ তোমাকে কী কী বলবে, সেই চিন্তা করো। কখনো নিজেকে অন্যের থেকে ছোট মনে করো না!
    ৩. সেরা পারফর্মারদের থেকে শিক্ষা নাও:
    আমাদের আশেপাশে এমন অনেক বন্ধু এবং বড় ভাই-বোন আছে, যারা স্টেজে উঠলে আগুন লাগিয়ে দেয়! এমন মানুষদের কাছ থেকে উপদেশ নিতে পারো, যে কী করলে ভালো হয় আর কী করলে খারাপ হয়। কীভাবে নিজের বাচনভঙ্গির উন্নতি করা যায়, সেটাও জানা যাবে।
    তুমি যদি একবার এই মঞ্চভীতি কাটিয়ে উঠতে পারো, তাহলে আর কখনোই তোমাকে এই ভয় তাড়া করবেনা। এইসব উপায়গুলো মেনে চলার পাশাপাশি উপস্থাপনা, উপস্থিত বক্তৃতা, আবৃত্তি, মঞ্চনাটকে অংশগ্রহণ করে তোমার ভয়কে ছুমন্তর ছু বলে তাড়িয়ে দাও খুব জলদি!

No comments

The Undertaker & Roman Reigns vs. Shane McMahon & Drew McIntyre

The Undertaker & Roman Reigns vs. Shane McMahon & Drew McIntyre:  <iframe src="https://www.facebook.com/plugins/video.php...